হিন্দি ও সংস্কৃতের লুকানো যোগসূত্র: যা আপনার ধারণা বদলে দেবে

webmaster

힌디어 산스크리트어 관계 - **Prompt:** A visually rich depiction of the "Roots of Language." Envision a magnificent, ancient Ba...

বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই সুস্থ এবং ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে এমন এক দারুণ বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি যা নিয়ে অনেকেই জানতে চান, কিন্তু হয়তো সঠিক বা সহজ তথ্য পান না। আমাদের চারপাশে অনেক ভাষা আছে, আর তাদের মধ্যে কিছু ভাষার সম্পর্ক তো এতটাই গভীর যে শুনলে অবাক হয়ে যেতে হয়। তেমনই এক অবিচ্ছেদ্য এবং fascinating সম্পর্ক হলো হিন্দি আর সংস্কৃত ভাষার। আমার দীর্ঘদিনের ভাষা নিয়ে আগ্রহ আর বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখেছি, এই দুই ভাষার মধ্যে এক অদ্ভুত মায়াজাল জড়িয়ে আছে। কেউ কেউ ভাবেন হিন্দি সরাসরি সংস্কৃত থেকে এসেছে, আবার কেউ মনে করেন তাদের জন্মস্থান বা পথ আলাদা। এই বিষয়টা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা বিভিন্ন ফোরামে নানা রকমের আলোচনা দেখা যায়। আমরা যদি এই সম্পর্কের গভীরতাটা ঠিকঠাক বুঝতে পারি, তাহলে ভাষা শিক্ষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বাড়বে বলেই আমার বিশ্বাস। চলুন, আজ আমরা এই রহস্যের জট খুলে ফেলি, আর জেনে নিই হিন্দি আর সংস্কৃতের সত্যিকারের সম্পর্কটা ঠিক কেমন। নিশ্চিতভাবে জানতে হলে চলুন ডুব দিই এই ভাষার সাগরে!

힌디어 산스크리트어 관계 관련 이미지 1

ভাষার শেকড়: ইতিহাসের আয়নায়

বন্ধুরা, ভাষার ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটতে গিয়ে আমি সব সময়ই এক অদ্ভুত ভালো লাগা অনুভব করি। ঠিক যেন কোনো পুরোনো পরিবারের ছবির অ্যালবাম দেখছি, যেখানে প্রতিটি মুখের পেছনেই লুকিয়ে আছে এক না বলা গল্প। হিন্দি আর সংস্কৃতের সম্পর্কও ঠিক তেমনই এক ইতিহাসের মোড়কে মোড়া। আমরা জানি, সংস্কৃতকে বলা হয় ‘দেবভাষা’, অর্থাৎ দেবতাদের ভাষা। এর জন্ম বহু হাজার বছর আগে, যখন বৈদিক সভ্যতা তার পূর্ণ প্রস্ফুটিত রূপে ছিল। বেদ, উপনিষদ, পুরাণ – এসবের মাধ্যমেই সংস্কৃতের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমার মনে হয়, যেকোনো ভাষা বোঝার আগে তার জন্মবৃত্তান্তটা জানা ভীষণ জরুরি। যেমন ধরুন, কোনো মানুষের স্বভাব বুঝতে হলে তার ছোটবেলার গল্পটা শোনা দরকার হয়, ঠিক তেমনই। সংস্কৃত কেবল একটি ভাষা ছিল না, এটি ছিল জ্ঞান, দর্শন, বিজ্ঞান আর সংস্কৃতির এক বিশাল ভান্ডার। এর প্রভাব এতটাই সুদূরপ্রসারী ছিল যে, প্রাচীন ভারতের প্রতিটি কোণায় এর পদচিহ্ন স্পষ্ট দেখা যেত। যখন আমি সংস্কৃত নিয়ে পড়া শুরু করি, তখন এর ব্যাকরণের যে নিখুঁত বুনন আর শব্দের যে গভীরতা, তা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি সূত্র যেন এক একটি দর্শন বহন করে। এই দেবভাষাই পরবর্তীকালে বিভিন্ন পথে হেঁটে আজকের হিন্দি ভাষার জন্ম দিয়েছে, ঠিক যেন এক বিশাল গাছের মূল থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র শাখা-প্রশাখা। আমার দীর্ঘদিনের গবেষণা আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এই শেকড়টা মজবুত না হলে আজকের হিন্দি ভাষার এই বলিষ্ঠ রূপটা হয়তো আমরা দেখতে পেতাম না। তাই এই সম্পর্কের গভীরে ডুব দিতে হলে প্রথমে আমাদের প্রাচীন ভারতবর্ষের ভাষার পরিবেশটা ভালোভাবে বুঝতে হবে।

প্রাচীন আর্যদের ভাষা

প্রাচীন আর্যরা যখন ভারতীয় উপমহাদেশে এসে বসতি স্থাপন করেন, তখন তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন এক বিশেষ ধরনের ভাষা, যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের এক অন্যতম শাখা। এই ভাষাই সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে বৈদিক সংস্কৃত এবং পরবর্তীতে ক্লাসিক্যাল সংস্কৃতে রূপ নেয়। আমি যখন প্রথম এই ইতিহাস পড়ি, তখন ভেবেছিলাম, এত প্রাচীন একটি ভাষা কীভাবে এত সুসংগঠিত হতে পারে! অবাক করার মতো বিষয় হলো, সেই সময়েই পাণিনির মতো ব্যাকরণবিদরা সংস্কৃতকে এক নির্দিষ্ট ছাঁচে ফেলে দেন, যা আজও অপরিবর্তিত। তাদের সেই কঠোর ব্যাকরণিক নিয়মাবলিই এই ভাষাকে চিরকাল শুদ্ধ এবং অক্ষত রেখেছে। প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থগুলো যখন পড়ি, তখন মনে হয় যেন সরাসরি সেই সময়ের মানুষের সাথে কথা বলছি। তাদের চিন্তা-চেতনা, তাদের জীবনযাত্রা সবটাই যেন ভাষার মধ্যে দিয়ে মূর্ত হয়ে ওঠে। আর এই দেবভাষাই তো ছিল সেই সময়ে সাধারণ মানুষের উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের প্রধান মাধ্যম।

প্রাকৃত থেকে হিন্দির জন্ম

সংস্কৃত যখন ছিল পন্ডিত আর উচ্চশ্রেণীর ভাষা, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা, যাদেরকে আমরা প্রাকৃত ভাষা বলে জানি। এই প্রাকৃত ভাষাগুলোই ছিল সংস্কৃতির সরলীকৃত রূপ, যা সময়ের সাথে সাথে আরও পরিবর্তিত হতে থাকে। আমি মনে করি, ভাষার এই পরিবর্তনটা খুবই স্বাভাবিক। যেমন ধরুন, আমরা যখন বন্ধুদের সাথে কথা বলি, তখন কি আর সব সময় বইয়ের ভাষা ব্যবহার করি? ঠিক তেমনই, সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ভাষা সরল হতে থাকে, সহজ রূপ নেয়। এই প্রাকৃত ভাষাগুলো থেকে জন্ম নেয় অপভ্রংশ, আর এই অপভ্রংশ থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় আজকের হিন্দি। আমার মতে, এই বিবর্তন প্রক্রিয়াটা সত্যিই অসাধারণ। একটা ভাষা কীভাবে বিভিন্ন স্তর পার করে নতুন এক রূপে আত্মপ্রকাশ করে, তা এক শিক্ষণীয় বিষয়। এই পথচলাটাই প্রমাণ করে যে হিন্দি সরাসরি সংস্কৃত থেকে না এলেও, এর শেকড় যে সংস্কৃতের গভীরে প্রোথিত, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এই বিবর্তন হিন্দি ভাষাকে নিজস্ব এক পরিচয় দিয়েছে, কিন্তু তার অতীতকে সে কখনোই ভোলেনি।

ব্যাকরণ আর শব্দভান্ডার: অদৃশ্য সেতু

ভাষা মাত্রেরই নিজস্ব এক কাঠামো থাকে, যা তার মেরুদন্ডের মতো কাজ করে। হিন্দি আর সংস্কৃতের ক্ষেত্রে এই মেরুদন্ডটি যেন একই ধাতু দিয়ে তৈরি, যদিও তার বহির্গঠনে কিছু পার্থক্য রয়েছে। আমি যখন প্রথম হিন্দি ব্যাকরণ শিখতে শুরু করি, তখন অদ্ভুতভাবে সংস্কৃতের সাথে এর মিল খুঁজে পেতাম। বিশেষ করে ক্রিয়া পদ এবং বিশেষ্য পদ গঠনে এই সাদৃশ্য এতটাই স্পষ্ট যে, মনে হয় যেন এক অদৃশ্য সেতু দুই ভাষাকে বেঁধে রেখেছে। সংস্কৃতের তৎসম শব্দগুলি হিন্দিতে এসে নিজেদের মৌলিক রূপ বজায় রেখেছে, যা এর শব্দভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। আমার কাছে মনে হয়, এই শব্দভান্ডারের গভীরতা একটা ভাষার শক্তি। আপনি যদি সংস্কৃতের কিছু মূল শব্দ জানেন, তাহলে হিন্দি বোঝাটা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এটাই বলে। যেমন ধরুন, ‘জল’, ‘অগ্নি’, ‘ধর্ম’, ‘কর্ম’ – এই শব্দগুলো উভয় ভাষাতেই অবিকল একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই বিষয়টা আমাকে সব সময়ই মুগ্ধ করে। ভাষাবিদরা হয়তো এর পেছনে অনেক জটিল তত্ত্ব খাটান, কিন্তু একজন সাধারণ ভাষা শিক্ষার্থীর চোখে এটি যেন এক মায়াবী সংযোগ। এই অদৃশ্য সেতু না থাকলে হিন্দির বর্তমান রূপ হয়তো এতটা সুদৃঢ় হতো না, আর এর প্রকাশভঙ্গিও এতটা সমৃদ্ধ হতে পারতো না। তাই শব্দ আর ব্যাকরণের এই সম্পর্কটা বোঝাটা এই দুই ভাষার গভীরতা অনুধাবনের জন্য অপরিহার্য।

ক্রিয়া আর বিশেষ্যের মিল

সংস্কৃতের ক্রিয়া পদ এবং বিশেষ্য পদের যে গঠনশৈলী, তার অনেকটাই হিন্দিতে পরিবর্তিত আকারে দেখতে পাওয়া যায়। আমি যখন সংস্কৃতের বিভক্তি আর হিন্দি ক্রিয়ার রূপান্তর শিখছিলাম, তখন খেয়াল করলাম, অনেক সময়ই ক্রিয়া পদের মূল ধাতুটি সংস্কৃতিরই থাকে, কেবল তাতে হিন্দির প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন রূপ নেয়। যেমন, সংস্কৃতের ‘কৃ’ ধাতু থেকে ‘করনা’ (করা) শব্দটি আসে। বিশেষ্য পদের ক্ষেত্রেও একইরকম প্রবণতা দেখা যায়। অনেক বিশেষ্য শব্দ সরাসরি সংস্কৃত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, আর কিছু শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে হিন্দিতে প্রবেশ করেছে। আমার মনে হয়, ভাষার এই ধরনের ধার নেওয়া প্রক্রিয়া তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। কারণ, এর মাধ্যমে একটি ভাষা তার পূর্বসূরীর জ্ঞান আর ঐতিহ্যের ভার বহন করে নিয়ে যেতে পারে। এই পারস্পরিকতা ভাষার মধ্যে এক ধরনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, যা ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক।

তৎসম শব্দের ভান্ডার

হিন্দি ভাষার শব্দভান্ডারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো তৎসম শব্দ, যা সরাসরি সংস্কৃত থেকে কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই গৃহীত হয়েছে। আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে দেখেছি, হিন্দির আনুষ্ঠানিক বা সাহিত্যিক রচনায় এই তৎসম শব্দের ব্যবহার অনেক বেশি দেখা যায়। যখন আমি বিভিন্ন হিন্দি বই পড়ি, তখন প্রায়শই এমন অনেক শব্দ খুঁজে পাই যা হুবহু সংস্কৃতের মতোই। এই শব্দগুলো শুধু হিন্দির শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধই করেনি, বরং এটিকে এক বিশেষ ধরনের ওজন এবং গভীরতা প্রদান করেছে। যেমন, ‘সংস্কৃতি’, ‘শিক্ষা’, ‘আকাশ’, ‘পৃথিবী’ – এই শব্দগুলো হিন্দিতে অহরহ ব্যবহৃত হয় এবং এদের অর্থও সংস্কৃতে যা, হিন্দিতেও তাই। এই দিকটা প্রমাণ করে যে, হিন্দি তার মূল উৎসকে কখনোই ভুলতে পারেনি, বরং তাকে পরম শ্রদ্ধার সাথে নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে। একজন বাঙালি হিসেবে আমার কাছে এই ব্যাপারটা আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগে, কারণ আমাদের বাংলা ভাষাতেও তৎসম শব্দের একটা বড় প্রভাব আছে।

Advertisement

আধুনিক হিন্দিতে সংস্কৃতের ছোঁয়া

আজকের দিনে আমরা যে আধুনিক হিন্দি ভাষা ব্যবহার করি, তার প্রতিটি পরতে পরতে যেন সংস্কৃতের এক মিষ্টি ছোঁয়া লেগে আছে। আমার মতে, এটি শুধু ব্যাকরণ বা শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভাষার যে সামগ্রিক মেজাজ, তার মধ্যেও এই প্রভাব স্পষ্ট। যখন আমি হিন্দি সাহিত্য পড়ি, তখন দেখি যে অনেক কবি, লেখক এখনও তাদের লেখায় সংস্কৃতের শব্দচয়নের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেন। এর কারণ হলো, সংস্কৃত শব্দগুলো হিন্দিতে এক ধরনের গাম্ভীর্য এবং গভীরতা এনে দেয়, যা অন্য কোনো ভাষা থেকে ধার করা শব্দ দিতে পারে না। বিশেষ করে ধর্মীয় আলোচনা, দার্শনিক চিন্তাভাবনা বা উচ্চাঙ্গের সাহিত্য রচনায় সংস্কৃতের এই উপস্থিতি অনস্বীকার্য। আমার মনে হয়, ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি সংস্কৃতিরও ধারক ও বাহক। আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে, হিন্দি তার শেকড়কে কখনোই হারায়নি, বরং তাকে আরও মজবুত করেছে। বিভিন্ন হিন্দি সংবাদমাধ্যম, সরকারি নথি বা শিক্ষামূলক বইয়ে এখনও বহু সংস্কৃতভিত্তিক শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা হিন্দির আনুষ্ঠানিকতাকে বজায় রাখে। এই ভাষার গঠন এবং শব্দচয়নে সংস্কৃতের যে প্রভাব, তা হিন্দি ভাষাকে এক অনন্য উচ্চতা দিয়েছে। আমি নিজে যখন হিন্দি শেখার প্রথম দিকে সংস্কৃতের কিছু শ্লোক পাঠ করতাম, তখন তাদের মধ্যে যে ধ্বনিগত মিল খুঁজে পেতাম, তা আমাকে মুগ্ধ করত। এই ধ্বনিগত মিলগুলিই যেন দুটি ভাষার মধ্যে এক অদৃশ্য সেতুবন্ধন তৈরি করে রেখেছে।

সাহিত্য ও শিক্ষার মাধ্যম

হিন্দি সাহিত্য, বিশেষ করে ক্লাসিক্যাল এবং আধ্যাত্মিক সাহিত্যে সংস্কৃতের অবদান অপরিসীম। রামায়ণ, মহাভারত বা বিভিন্ন পুরাণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দিতে অসংখ্য কাব্য, নাটক এবং গল্প লেখা হয়েছে। আমার মনে পড়ে, একবার আমি একজন বিখ্যাত হিন্দি কবির কবিতা পড়ছিলাম, যেখানে তিনি এত সুন্দরভাবে সংস্কৃতের শব্দ ব্যবহার করেছিলেন যে মনে হচ্ছিল যেন সংস্কৃত নিজেই হিন্দির ছদ্মবেশে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও হিন্দি আর সংস্কৃতের সম্পর্ক গভীর। অনেক স্কুল-কলেজে সংস্কৃত এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। এর মূল কারণ হলো, সংস্কৃত শিখলে হিন্দি সহ অন্যান্য ভারতীয় ভাষাগুলো বোঝা সহজ হয়ে যায়। আমি মনে করি, এই বিষয়টি আমাদের ভাষা শিক্ষার পদ্ধতিকে আরও সমৃদ্ধ করে। ভাষার এই ধারাবাহিকতা আমাদের সংস্কৃতিকেও বাঁচিয়ে রেখেছে, যা প্রতিটি ভারতীয়র জন্য গর্বের বিষয়।

দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব

শুধু সাহিত্য আর শিক্ষা জগতেই নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হিন্দি শব্দেও সংস্কৃতের ছোঁয়া স্পষ্ট। হয়তো আমরা সব সময় খেয়াল করি না, কিন্তু সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা যত হিন্দি শব্দ ব্যবহার করি, তার একটা বড় অংশই সংস্কৃত থেকে আগত। যেমন, ‘নমস্তে’, ‘ধন্যবাদ’, ‘শান্তি’, ‘সুখ’ – এই শব্দগুলো আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মিশে আছে। আমার যখন প্রথম হিন্দি শেখা শুরু করি, তখন এই সাধারণ শব্দগুলোর উৎস জানতে পেরে অবাক হয়েছিলাম। এই শব্দগুলো যে শুধু ভাষা নয়, বরং এর সাথে জড়িত আবেগ আর সংস্কৃতির এক বিশাল ভান্ডার, তা আমি তখন উপলব্ধি করেছিলাম। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা সামাজিক রীতিনীতিতে যে হিন্দি গান বা মন্ত্র পাঠ করা হয়, তার অধিকাংশই সংস্কৃত প্রভাবিত। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এই দৈনন্দিন ব্যবহারই দুটি ভাষার মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, যা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে।

উচ্চারণ আর ধ্বনিতত্ত্বের মিল

ভাষার প্রাণ তার উচ্চারণে, তার ধ্বনিতে। আর এই দিক দিয়ে হিন্দি ও সংস্কৃতের মধ্যে আমি যে গভীর মিল দেখতে পাই, তা আমাকে সব সময়ই বিস্মিত করে। আমি নিজে যখন উভয় ভাষা উচ্চারণ করি, তখন মনে হয় যেন একই স্বরযন্ত্র থেকে দুটি ভিন্ন সুর বাজছে, কিন্তু তাদের মূর্ছনা একই রকম। দেবনাগরী লিপি, যা হিন্দি লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়, তা মূলত সংস্কৃতের লিপিরই আধুনিক রূপ। আর এই লিপির প্রতিটি অক্ষরের উচ্চারণ পদ্ধতিও সংস্কৃতের সাথে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। আমার মনে হয়, এই ধ্বনিতত্ত্বগত মিলই দুটি ভাষাকে একে অপরের এত কাছে নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতে প্রতিটি ধ্বনির একটি নির্দিষ্ট স্থান এবং উচ্চারণ পদ্ধতি রয়েছে, যা খুবই বৈজ্ঞানিক। আর হিন্দিতেও সেই বিজ্ঞানসম্মত উচ্চারণ পদ্ধতির অনেকটাই বজায় রাখা হয়েছে। যেমন, ‘क’, ‘ख’, ‘ग’, ‘घ’ – এই বর্ণগুলির উচ্চারণ প্রায় একই রকম। এই বৈশিষ্ট্যই হিন্দি শেখার সময় আমাকে অনেক সাহায্য করেছে, কারণ আমি সংস্কৃতের উচ্চারণ বিধি সম্পর্কে কিছুটা জানতাম। এই ধ্বনিগত সাদৃশ্য দুটি ভাষার মধ্যে এক ধরনের লয় তৈরি করেছে, যা শুনতে খুবই ভালো লাগে এবং ভাষার অর্থবোধকেও সহজ করে তোলে। এই মিল না থাকলে হয়তো দুটি ভাষা একই ইন্দো-আর্য পরিবারের সদস্য হলেও তাদের মধ্যে এত নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠতো না।

বর্ণমালা আর স্বরের গুরুত্ব

সংস্কৃত বর্ণমালা এতটাই সুসংগঠিত যে ভাষাবিদরা একে প্রায় নিখুঁত বলে থাকেন। স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণের যে বিন্যাস, তা একটি ভাষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমি দেখেছি, হিন্দির বর্ণমালাতেও সেই একই বিন্যাসকে অনুসরণ করা হয়েছে। সংস্কৃতির স্বরবর্ণগুলি যেমন হিন্দিতেও নিজের স্থান বজায় রেখেছে, তেমনি ব্যঞ্জনবর্ণগুলির উচ্চারণেও বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই কারণে, একজন সংস্কৃত জানা মানুষ খুব সহজেই হিন্দি পড়তে এবং উচ্চারণ করতে পারেন। আমার মনে হয়, এই বর্ণমালার অভিন্নতা ভাষার দুটি স্রোতকে এক করেছে। স্বরধ্বনিগুলির সঠিক উচ্চারণ একটি ভাষার মাধুর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, আর এই ক্ষেত্রে সংস্কৃত ও হিন্দি উভয়ই একে অপরের পরিপূরক। এই বিষয়টা আমাকে সব সময়ই ভাবিয়ে তোলে, কীভাবে হাজার হাজার বছর ধরে একটি ভাষা তার ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্যকে এত সুন্দরভাবে ধরে রাখতে পেরেছে!

একই উচ্চারণের কৌশল

সংস্কৃতে যে স্থান থেকে বর্ণগুলি উচ্চারিত হয় (যেমন, কণ্ঠ্য, তালব্য, মূর্দ্ধন্য, দন্ত্য, ওষ্ঠ্য), হিন্দিতেও সেই একই কৌশল প্রায় অবিকল অনুসরণ করা হয়। আমার যখন প্রথম এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ হয়েছিল, তখন আমি অবাক হয়েছিলাম। এর মানে হলো, আমরা যখন একটি হিন্দি শব্দ উচ্চারণ করি, তখন অবচেতন মনেই আমরা সংস্কৃতের পুরোনো উচ্চারণ পদ্ধতিকে ব্যবহার করছি। এটি ভাষার মধ্যে এক ধরনের প্রাকৃতিক সংযোগ তৈরি করে, যা ভাষার শ্রুতিমধুরতা এবং স্পষ্টতাকে বজায় রাখে। এই একই উচ্চারণের কৌশল দুটি ভাষাকে পরস্পরের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং তাদের পারস্পরিক বোঝাপড়াকে আরও সহজ করে তোলে। এই ধ্বনিগত সাদৃশ্যই ভাষার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে এবং এর মাধ্যমে আমরা প্রাচীন সংস্কৃতি ও আধুনিকতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন দেখতে পাই। আমার মনে হয়, এই বৈশিষ্ট্যটিই এই দুটি ভাষার দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের অন্যতম মূল ভিত্তি।

Advertisement

সংস্কৃতি আর ভাষার নিবিড় বন্ধন

সংস্কৃতি আর ভাষার সম্পর্কটা ঠিক যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একটিকে ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, যেকোনো ভাষা শিখতে গেলে তার সংস্কৃতির গভীরে ডুব দিতে হয়, আর সংস্কৃতি বুঝতে গেলে তার ভাষার সঙ্গে পরিচিত হওয়া জরুরি। হিন্দি আর সংস্কৃতের ক্ষেত্রে এই বন্ধন এতটাই নিবিড় যে, এদের আলাদা করে দেখা প্রায় অসম্ভব। প্রাচীন ভারতের যে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, তার বেশিরভাগই সংস্কৃত ভাষার মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, কাব্য – সবকিছুরই মূল ভাষা ছিল সংস্কৃত। আর এই সংস্কৃতেরই হাত ধরে হিন্দি ভাষা সেই প্রাচীন ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে। যখন আমি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের উৎসব, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা লোকগাথা দেখি, তখন তাদের মধ্যে যে হিন্দি ভাষা ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে সংস্কৃতের এক গভীর প্রভাব খুঁজে পাই। এই প্রভাব কেবল শব্দচয়নে সীমাবদ্ধ নয়, বরং চিন্তা-চেতনা এবং প্রকাশের ভঙ্গিতেও এর ছোঁয়া লেগে আছে। আমার মনে হয়, এই সাংস্কৃতিক বন্ধনই দুটি ভাষার মধ্যে এক অটুট সম্পর্ক তৈরি করেছে, যা হাজার হাজার বছর ধরে টিকে আছে। এই ভাষার মধ্য দিয়েই এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্য, জ্ঞান আর দর্শন প্রবাহিত হয়েছে। এই সাংস্কৃতিক দিকটা বোঝাটা খুবই জরুরি, কারণ ভাষা কেবল ধ্বনি আর শব্দের সমষ্টি নয়, এটি একটি জাতির আত্মা। নিচের টেবিলে আমরা হিন্দি ও সংস্কৃতের কিছু মূল পার্থক্য ও সাদৃশ্য দেখতে পারি।

হিন্দি ও সংস্কৃতের কিছু মূল পার্থক্য ও সাদৃশ্য
বৈশিষ্ট্য সংস্কৃত হিন্দি
উৎপত্তি প্রাচীন ইন্দো-আর্য ভাষা, বৈদিক যুগ প্রাকৃত ও অপভ্রংশ থেকে উদ্ভূত, প্রায় ১০ম শতাব্দী থেকে বিকাশ
সাহিত্যিক প্রয়োগ ধর্মীয়, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও ক্লাসিক্যাল সাহিত্য আধুনিক সাহিত্য, সংবাদ, চলচ্চিত্র, দৈনন্দিন যোগাযোগ
ব্যাকরণ অত্যন্ত জটিল, বিভক্তি প্রধান, ৮টি কারক সরলীকৃত ব্যাকরণ, উপসর্গ ও প্রত্যয় প্রধান, দুটি লিঙ্গ
শব্দভান্ডার তৎসম ও তদ্ভব শব্দের উৎস তৎসম, তদ্ভব, দেশী ও বিদেশী শব্দের মিশ্রণ
সাধারণ ব্যবহার সাধারণত ধর্মীয় আচার, শ্লোক পাঠ, উচ্চশিক্ষা ভারতের প্রধান ভাষাগুলির মধ্যে অন্যতম, ব্যাপক ব্যবহৃত

ধর্মীয় গ্রন্থ ও ভাষার সংরক্ষণ

প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় গ্রন্থগুলো সংস্কৃতে রচিত হওয়ায় এই ভাষাটি এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বেদ, উপনিষদ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা – সবই সংস্কৃত ভাষায় লিখিত। আমার মনে পড়ে, একবার এক মন্দিরে গিয়ে আমি সংস্কৃত মন্ত্র পাঠ শুনছিলাম, তখন হিন্দিতে তার অনুবাদ শুনে আমার মনে হয়েছিল যেন দুটি ভাষা একই সুরে কথা বলছে। এই ধর্মীয় গ্রন্থগুলোই সংস্কৃত ভাষাকে হাজার হাজার বছর ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে। আর হিন্দি ভাষা সেই ঐতিহ্যকে বহন করে আজকের প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি ভাষাকে কেবল সংরক্ষণই করেনি, বরং এটিকে আরও শক্তিশালী করেছে। আমি মনে করি, ভাষার এই ধর্মীয় সংযোগই এর টিকে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ। এই প্রাচীন গ্রন্থগুলির অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা শুধু ভাষাই শিখি না, বরং একটি সভ্যতার গভীরতাও উপলব্ধি করতে পারি।

উৎসব-পার্বণে ভাষার ভূমিকা

ভারতের বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে হিন্দি ভাষার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, আর এর মধ্যেও সংস্কৃতের প্রভাব স্পষ্ট। দিওয়ালি, হোলি, দুর্গাপূজা বা অন্যান্য যেকোনো অনুষ্ঠানে যে গান, ভজন বা মন্ত্র পাঠ করা হয়, তার অধিকাংশই সংস্কৃত প্রভাবিত বা সরাসরি সংস্কৃত থেকে নেওয়া। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যখন কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে হিন্দিতে ভজন গাওয়া হয়, তখন তার সুর আর শব্দ আমাকে প্রাচীন ভারতের এক পবিত্র পরিবেশে নিয়ে যায়। এই উৎসবগুলি কেবল আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ নয়, এগুলি ভাষার মাধ্যমে সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখারও এক অনন্য মাধ্যম। এই ক্ষেত্রে হিন্দি ভাষা এক সেতুর মতো কাজ করে, যা প্রাচীন সংস্কৃতের ঐতিহ্যকে আধুনিক ভারতের উৎসবে মিশিয়ে দেয়। এই ভূমিকাই প্রমাণ করে যে, হিন্দি আর সংস্কৃত শুধু দুটি ভাষা নয়, বরং তারা একই সাংস্কৃতিক পরিবারের সদস্য।

힌디어 산스크리트어 관계 관련 이미지 2

আধুনিক যুগের ভাষা বিবর্তন

সময় সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটায়, আর ভাষা এর ব্যতিক্রম নয়। আধুনিক যুগে এসে হিন্দি ভাষা এক নতুন বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর এই বিবর্তনে প্রযুক্তির প্রভাব এতটাই বেশি যে তা চোখ এড়ানোর উপায় নেই। আমার মনে হয়, ভাষা যেন এক জীবন্ত সত্তা, যা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিজেকে পরিবর্তন করে। বিশ্বায়ন এবং ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে হিন্দি এখন কেবল ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং বিশ্বজুড়ে এর ব্যবহার বাড়ছে। যখন আমি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিতে হিন্দি কনটেন্ট দেখি, তখন এর মধ্যে ইংরেজি সহ অন্যান্য বিদেশী ভাষার শব্দের মিশ্রণ লক্ষ্য করি। এই মিশ্রণ হিন্দি ভাষাকে আরও গতিশীল এবং আধুনিক করে তুলছে। কেউ কেউ হয়তো মনে করেন যে এই মিশ্রণ ভাষার বিশুদ্ধতা নষ্ট করছে, কিন্তু আমার মতে এটি ভাষার সমৃদ্ধিরই এক লক্ষণ। একটি ভাষা যত বেশি অন্য ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করে, ততই সে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই আধুনিক বিবর্তন প্রক্রিয়ায় হিন্দি তার মূল সংস্কৃত শেকড়কে ধরে রেখেও নতুনত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেমন একটি প্রাচীন গাছ নতুন নতুন শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে, তেমনি হিন্দিও নিজেকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বিকশিত করছে।

প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের প্রভাব

প্রযুক্তি আর বিশ্বায়ন আধুনিক হিন্দি ভাষার বিবর্তনে এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল ফোন – এই সব কিছুই হিন্দির ব্যবহারকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। আমি দেখেছি, অনলাইন দুনিয়ায় হিন্দিতে লেখালেখি বা ভিডিও কনটেন্ট তৈরির প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে হিন্দি ভাষা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং নতুন নতুন শব্দ ও বাক্যাংশ এর শব্দভান্ডারে যুক্ত হচ্ছে। ইংরেজি ভাষার প্রভাবও এখানে অনস্বীকার্য। অনেক সময় হিন্দি আর ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে এক নতুন ধরনের ভাষা তৈরি হচ্ছে, যা ‘হিংলিশ’ নামে পরিচিত। আমার মনে হয়, এই ধরনের মিশ্রণ আধুনিক প্রজন্মের কাছে খুবই আকর্ষণীয়, কারণ এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রতিফলিত করে। এই প্রক্রিয়া ভাষার ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে এবং হিন্দি ভাষাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

হিন্দির নতুন রূপ

আজকের হিন্দি ভাষা তার পুরোনো রূপ থেকে অনেকটাই ভিন্ন। এটি কেবল ব্যাকরণগত বা শব্দভান্ডারগত পরিবর্তন নয়, বরং এর প্রকাশভঙ্গি এবং ব্যবহারের ধরনেও এসেছে নতুনত্ব। আমি যখন বিভিন্ন হিন্দি ওয়েব সিরিজ বা আধুনিক চলচ্চিত্র দেখি, তখন তাদের সংলাপের মধ্যে এক ধরনের সাবলীলতা আর স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাই। এই নতুন রূপটি হিন্দি ভাষাকে আরও বেশি প্রাণবন্ত এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তরুণ প্রজন্ম এখন আরও সহজে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে হিন্দি ব্যবহার করছে, যা ভাষার প্রসারে এক ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আমার মতে, এই নতুন রূপটি হিন্দির টিকে থাকার জন্য খুবই জরুরি, কারণ একটি ভাষা যদি সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারে, তাহলে তার টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ে। হিন্দি এই চ্যালেঞ্জটি সফলভাবে মোকাবিলা করছে এবং নিজেকে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী করে তুলছে, যা এর ভবিষ্যৎকে আরও সুরক্ষিত করছে।

Advertisement

আমার চোখে দুই ভাষার এই পথচলা

একজন ভাষা অনুরাগী হিসেবে হিন্দি আর সংস্কৃতের এই দীর্ঘ পথচলা আমাকে সব সময়ই আবেগাপ্লুত করে তোলে। আমার কাছে এই দুই ভাষা শুধু ব্যাকরণের নিয়ম বা শব্দের সমষ্টি নয়, বরং তারা যেন দুটি প্রাচীন নদী, যারা ভিন্ন পথে প্রবাহিত হয়েও একই সমুদ্রে মিশেছে। আমার মনে পড়ে, যখন আমি প্রথম সংস্কৃতের গভীরতা আর হিন্দির ব্যবহারিকতা উপলব্ধি করতে পারি, তখন আমার মধ্যে এক নতুন ধরনের জ্ঞান খুলে গিয়েছিল। এই ভাষা দুটি যেন একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃত হল সেই মজবুত শেকড়, যা থেকে হিন্দি তার রসদ পায়, আর হিন্দি হল সেই শাখা-প্রশাখা, যা সেই রসদকে বিস্তৃত করে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। আমি দেখেছি, যখন কোনো ব্যক্তি উভয় ভাষা সম্পর্কেই জ্ঞান রাখেন, তখন ভারতীয় সংস্কৃতি আর সাহিত্যের প্রতি তার উপলব্ধি আরও গভীর হয়। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে ভাষার মধ্যে কোনো বিভেদ নেই, বরং তাদের মধ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত মিল আর সহযোগিতা। এটি যেন একটি বড় পরিবারের দুই ভাই-বোনের গল্প, যেখানে একজন হয়তো একটু গম্ভীর আর অন্যজন চটপটে, কিন্তু তাদের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধনটা অটুট। এই সম্পর্ক আমাকে মুগ্ধ করে, অনুপ্রাণিত করে এবং ভাষা শিক্ষার প্রতি আমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আমি বিশ্বাস করি, এই দুই ভাষার সম্পর্ক বোঝাটা শুধুমাত্র ভাষা শিক্ষার জন্য নয়, বরং ভারতের সমৃদ্ধ ইতিহাস আর সংস্কৃতি বোঝার জন্যও অপরিহার্য।

ভাষা শিক্ষায় আমার অভিজ্ঞতা

আমার ভাষা শেখার যাত্রায় হিন্দি আর সংস্কৃত দুটিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথমে যখন আমি হিন্দি শেখা শুরু করি, তখন এর সাবলীলতা আর সহজবোধ্যতা আমাকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু যত দিন যেতে থাকে, ততই আমি এর গভীরতায় ডুব দিতে শুরু করি এবং এর সংস্কৃত শেকড়গুলির সন্ধান পাই। আমার মনে আছে, একবার একটি পুরোনো হিন্দি গ্রন্থ পড়তে গিয়ে আমি অনেক সংস্কৃত শব্দ পেয়েছিলাম, যা আমার ভাষাজ্ঞানকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে একটি ভাষা শেখার সময় তার উৎস সম্পর্কে জানলে সেই ভাষাটি আরও ভালোভাবে বোঝা যায়। আমি যখন সংস্কৃতের শ্লোক বা ব্যাকরণ শিখতাম, তখন হিন্দির অনেক নিয়ম আমার কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে যেত। এই পারস্পরিক সম্পর্ক ভাষা শিক্ষাকে আরও মজাদার এবং ফলপ্রসূ করে তুলেছে। এটি যেন এক ধাঁধার মতো, যার প্রতিটি অংশ একে অপরের সাথে সংযুক্ত।

ভবিষ্যতের দিকে এক ঝলক

হিন্দি আর সংস্কৃতের এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে কেমন হবে, তা নিয়ে আমার মনে সব সময়ই এক ধরনের কৌতূহল কাজ করে। আমার মনে হয়, প্রযুক্তি এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে হিন্দি ভাষা আরও নতুন নতুন শব্দ এবং প্রকাশভঙ্গি গ্রহণ করবে, কিন্তু এর মূল শেকড় – অর্থাৎ সংস্কৃতের প্রভাব – কখনোই মুছে যাবে না। সংস্কৃত হয়তো তার প্রাচীন মহিমা নিয়েই টিকে থাকবে, কিন্তু হিন্দির মাধ্যমে তার জ্ঞান আর ঐতিহ্য বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। আমি বিশ্বাস করি, এই দুটি ভাষা ভবিষ্যতেও একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকবে। নতুন প্রজন্ম যখন ভাষা শিখবে, তখন তারা এই দুটি ভাষার মধ্যেকার গভীর সম্পর্ককে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে। আমার চোখে, এটি কেবল দুটি ভাষার গল্প নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতির গল্প, একটি ঐতিহ্যের গল্প, যা সময়ের সাথে সাথে আরও বিকশিত হচ্ছে। এই অবিচ্ছেদ্য বন্ধনই ভারতের ভাষার জগতকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে, এই আমার বিশ্বাস।

글을마চি며

বন্ধুরা, হিন্দি আর সংস্কৃতের এই অসাধারণ সম্পর্ক নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ আর অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমার মনে হয়, এই ভাষার শেকড় যত গভীরে প্রোথিত, তার ফলও ততটাই মিষ্টি ও সুস্বাদু। দুটি ভাষা যেন এক প্রাচীন মহীরুহের ডালপালা, যা একসাথেই বেড়ে উঠেছে, একে অপরের পরিপূরক হয়ে। এই বন্ধন শুধু ভারতের ভাষাগত ঐতিহ্যকেই সমৃদ্ধ করেনি, বরং আমাদের সংস্কৃতি আর আত্মাকেও এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে। আশা করি, আমার এই আলোচনা আপনাদের হিন্দি আর সংস্কৃতের প্রতি নতুন এক ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে।

Advertisement

알아두면 쓸모 있는 정보

১. সংস্কৃতকে শুধু একটি ভাষা নয়, বরং ভারতের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও দর্শনের এক বিশাল ভান্ডার হিসেবে দেখুন। এর গভীরে ডুব দিলে প্রাচীন ভারতের জীবনযাত্রার এক ঝলক দেখতে পাবেন।

২. হিন্দি শেখার সময় কিছু মৌলিক সংস্কৃত শব্দ এবং ব্যাকরণিক ধারণা সম্পর্কে ধারণা রাখলে আপনার শেখার প্রক্রিয়া অনেক সহজ এবং ফলপ্রসূ হবে, আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

৩. আধুনিক হিন্দি সাহিত্যে বা সংবাদমাধ্যমে ব্যবহৃত বহু আনুষ্ঠানিক শব্দ সরাসরি সংস্কৃত থেকে এসেছে, যা ভাষার মান ও গভীরতা বাড়ায়। এই শব্দগুলি চিনে নিতে পারলে ভাষার প্রতি আপনার দক্ষতা বাড়বে।

৪. ভাষা পরিবর্তনের একটি চলমান প্রক্রিয়া। হিন্দিও সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নতুন নতুন শব্দ গ্রহণ করছে, যা ভাষার সমৃদ্ধিরই এক চিহ্ন। তাই এই পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুন।

৫. ভারতীয় সংস্কৃতিকে ভালোভাবে বুঝতে চাইলে হিন্দি আর সংস্কৃতের সম্পর্ককে উপেক্ষা করা যাবে না। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে লোকগাথা পর্যন্ত এই দুটি ভাষার অবদান অপরিহার্য।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় 정리

হিন্দি এবং সংস্কৃতের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং ঐতিহাসিক। সংস্কৃত হলো হিন্দির জননী বা মূল ভিত্তি, যা বৈদিক যুগ থেকে প্রাকৃত ও অপভ্রংশের মাধ্যমে হিন্দিতে বিবর্তিত হয়েছে। ব্যাকরণ, শব্দভান্ডার, উচ্চারণ এবং ধ্বনিতত্ত্বের দিক থেকে এই দুটি ভাষার মধ্যে অসংখ্য মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আধুনিক হিন্দি তার আনুষ্ঠানিকতা, সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে এখনও সংস্কৃতের প্রভাবকে সযত্নে লালন করে চলেছে। এমনকি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বহু হিন্দি শব্দ সংস্কৃত থেকেই এসেছে। প্রযুক্তি আর বিশ্বায়নের যুগে হিন্দি নতুন রূপে বিকশিত হলেও, তার মূল শেকড় সংস্কৃতের সাথেই অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত রয়েছে। এই নিবিড় বন্ধনই ভারতের ভাষাগত ঐতিহ্যকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে, যা আমাদের সংস্কৃতি আর আত্মাকে একত্রিত করে রেখেছে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: অনেকেই জানতে চান, হিন্দি কি সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে?

উ: না, ব্যাপারটা ঠিক এতটা সরল নয়, বন্ধুরা। আমার নিজের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ আর ভাষাবিদদের গবেষণা থেকে যা দেখেছি, হিন্দি সরাসরি সংস্কৃত থেকে জন্ম নেয়নি, বরং অনেকটা পথ ঘুরে এসেছে। আসলে হিন্দি হলো সংস্কৃতেরই এক নাতনি বা প্রপৌত্রী বলা যায়!
বৈদিক সংস্কৃত থেকে শুরু করে এটি বিভিন্ন প্রাকৃত ভাষা, যেমন শৌরসেনী প্রাকৃত এবং এরপর অপভ্রংশের মতো মধ্যবর্তী ধাপগুলো পেরিয়ে আধুনিক হিন্দির রূপ নিয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি, হিন্দি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ইন্দো-আর্য শাখার একটি গর্বিত সদস্য, যার মূল শিকড় অবশ্যই বৈদিক সংস্কৃতে প্রোথিত। কিন্তু পথটা সরলরৈখিক ছিল না, বরং বিবর্তনের এক দারুণ জার্নির ফল এই আজকের হিন্দি। ঠিক যেমন আমাদের পরিবারে দাদু-ঠাকুরমার ভাষা থেকে বাবা-মায়ের ভাষা একটু অন্যরকম হয়, তারপর আমাদের প্রজন্ম আরও আধুনিক করে তোলে, তেমনই ভাষার বিবর্তনও এক চলমান প্রক্রিয়া।

প্র: হিন্দি আর সংস্কৃতের মধ্যে তাহলে মূল পার্থক্যগুলো ঠিক কী কী?

উ: আমার বহুদিনের ভাষা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, হিন্দি আর সংস্কৃতের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যদিও তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রবল। সবচেয়ে বড় মিলটা হলো তাদের লিখন পদ্ধতি – দুটি ভাষাই দেবনাগরী লিপিতে লেখা হয়। এটা দেখে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। তবে, ব্যাকরণের দিক থেকে তারা বেশ আলাদা। সংস্কৃতের ব্যাকরণ অনেক বেশি জটিল আর সুনির্দিষ্ট, যেখানে শব্দের বিভক্তি, বচন, লিঙ্গ অনুযায়ী রূপের ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, সংস্কৃতে বিশেষ্য পদের জন্য সাতটি বিভক্তি থাকে, যা হিন্দি বা বাংলাতে তেমনটা নেই। হিন্দির ব্যাকরণ তুলনামূলকভাবে সহজবোধ্য এবং আধুনিক ইন্দো-আর্য ভাষার কাঠামোর সাথে বেশি মেলে। এছাড়া, শব্দভাণ্ডারের ক্ষেত্রেও পার্থক্য আছে। যদিও হিন্দিতে অনেক সংস্কৃত শব্দ রয়েছে, তবে মুঘল শাসনের প্রভাবে এতে ফারসি, আরবি এবং তুর্কি ভাষার অনেক শব্দ মিশে গেছে। অন্যদিকে, সংস্কৃত তার নিজস্ব প্রাচীন বিশুদ্ধতা বজায় রেখেছে। আমার মনে হয়, ঠিক যেমন আমাদের বাড়ির পুরনো দিনের তৈজসপত্র আর আধুনিক গ্যাজেট এক নয়, দেখতে কিছুটা মিল থাকলেও তাদের গঠন আর ব্যবহার ভিন্ন, ব্যাপারটা তেমনই।

প্র: সংস্কৃত থেকে উৎপত্তি হয়েও হিন্দি কিভাবে ফারসি, আরবি বা অন্যান্য ভাষার প্রভাব পেলো?

উ: এটা একটা দারুণ প্রশ্ন, আর এর উত্তরটা বেশ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। আমি যখন বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে ঘাটাঘাটি করি, তখন দেখি, উত্তর ভারতে মুসলিম শাসন যখন প্রসারিত হয় – যেমন দিল্লি সুলতানি ও মুঘল সাম্রাজ্যের সময়কালে – তখন ফারসি, আরবি ও তুর্কি ভাষার ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করে। এই শাসকরা তাদের রাজদরবারে ফারসি ব্যবহার করতেন, ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় ভাষার সাথে এই বিদেশি শব্দগুলো মিশে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে দিল্লির আশেপাশে যে ‘খারিবোলি’ উপভাষা প্রচলিত ছিল, সেটাই পরে হিন্দুস্তানি ভাষা নামে পরিচিত হয়। আর এই হিন্দুস্তানি থেকেই পরবর্তীকালে হিন্দি ও উর্দুর মতো দুটি প্রমিত ভাষার জন্ম হয়। হিন্দি মূলত সংস্কৃতের শব্দভাণ্ডার থেকে শব্দ গ্রহণ করলেও, এতে প্রচুর ফারসি ও আরবি শব্দও ঢুকে গেছে। ঠিক যেন আমাদের রান্নাঘরে নানা দেশের মসলা মিশে এক নতুন স্বাদ তৈরি করে, ভাষার ক্ষেত্রেও একই রকম হয়েছে। এই মিশ্রণই হিন্দিকে আজকের এত সমৃদ্ধ আর বৈচিত্র্যময় রূপে এনে দাঁড় করিয়েছে, যা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করে!

Advertisement